যেভাবে আমি লাভ বার্ডের ৫টি ডিম থেকে ৫টি বাচ্ছা পেয়েছি
প্রতিটি পাখি পালকের পাখি পালার ধরন
আলাদা, তাই আমি যা করি তাই ঠিক আর অন্যরা ভুল এমন নয়, তবে আমার এখানে যদি কোন ভুল
আপনার মনে হয় দয়া করে কমেন্টে জানাবেন।
ধাপ ০১ পাখির থাকার জায়গা নির্বাচনঃ
আপনাকে পাখীর জন্য নিরাপদ জায়গা নির্বাচন করতে
হবে। পাখি কিনার আগে ভাল করে ভেবে দেখুন আপনি যেখানে পাখি পালতে চান সেটা পাখিদের
জন্য নিরাপদ কিনা। নিরিবিলি পরিবেশ পাখিদের জন্য নিরাপদ, যেখানে সহজে বেড়াল, ইদুর
ইত্যাদি সহজে যেতে পারেনা, পর্যাপ্ত আলো বাতাস আছে।
ধাপ ২ পাখির খাঁচা নির্বাচনঃ
পাখির জন্য আদর্শ খাঁচা নির্বাচন করতে হবে। আমি
২০*১৮*১৮ মাপের খাঁচা দেই, যা ভালটা মিরপুরে ৭০০টাকা আর নরমারটা ৫০০টাকা। কাচায়
প্লাস্টিকের লাঠি না দিয়ে কাঠের লাঠি ব্যবহার করবেন, আমি গাছের ডাল ব্যবহার করি।
চেষ্টা করি নীমের ডাল দেয়ার। পানির পাত্র হিসাবে ভাল প্লাস্টিকের ফিল্টার দাম
২৫/৫০ টাকা আর খাবারের পাত্র অবশই স্টিলের। লাভ বার্ডের ঠোট অনেক শক্ত তাই
প্লাস্টিকের দিলে ওরা কামড়িয়ে খেয়ে ফেলতে পারে। পরে পাখি অসুস্থ হয়ে যেতে পারে
এমনকি মরেও যেতে পারে।
লাভ বার্ড ২ রকমের রিং বার্ড আর নন রিং বার্ড।
২টা পাখি ২ রকম (রিং বার্ড আর নন রিং বার্ড) হতে পারবে না। হয় ২টাই রিং বার্ড নয়
২টাই নন রিং বার্ড হতে হবে। পাখিদের বয়স মিনিমাম ১ বছর, সুস্থ সবল পাখি আপনাকে
নির্বাচন করতে হবে। অবিজ্ঞ কাউকে দিয়ে কনফার্ম হবেন আপনার পাখি মেইল ফিমেল ঠিক আছে
কিনা।
ধাপ ০৪ মেডিসিন কোর্স এবং খাবারঃ
পাখিকে বেলেন্সড খাবার দিতে হবে। গরমে তেল জাতীয়
খাবার (যেমন সূর্যমুখী) কমিয়ে দিতে হবে, শীতে বাড়িয়ে দিতে হবে। এই ব্যাপারে মির্জা
ইস্কান্দার ভাইয়ের লিস্ট ফলো করে পারেন।
প্রতিমাসে একবার ক্যালসিয়াম, জিংক, ভিটামিন
ইত্তাদির কোর্স করাবেন। পাখিকে ভিজানো ছোলা, সেদ্ধ ভুট্টা, বিভিন্ন রকমের শাক যেমন
কলমি , লালা শাক, পুই শাক, বাঁধাকপি খাওয়ানো শিখাবেন। সপ্তাহে ২ দিনের বেশি কলমির
শাক দিবেন না। এতে পাখির পুপ্স পাতলা হয়ে যায়। ভুলেও পুই শাক, কচুর শাক, চকলেট,
টেঙ্কের সরবত দিবেন না ;) ।
ধাপ ৫ হাড়ি ও নেস্টিং মেটেরিয়ালঃ
এবার পাখি যদি আপনার খাবার, পরিবেশ আর আপনার
সাথে মানিয়ে নেয় তখন আপনার উচিত নেস্টিং মেটেরিয়াল দেয়া। নেস্টিং মেটেরিয়াল হিসাবে
শুকণো খেজুর পাতা, শুকণো ধানের খড় ভাল সাথে নীমের পাতা রাখতে পারলে অনেক ভাল। করন
এতে হাড়ি বা বক্সে পোকা হবে না। নন রিং লাভ বার্ড কম নেস্টিং করে তাই আপনি এদের
হাড়িতে কিছু নেস্টিং মেটেরিয়াল দিয়ে দিতে পারেন। সুলতান বাবু ভাই এর কর্ণ কোব ও
ব্যবহার করতে পারেন। আবার কাঠের গুড়া যেটা আপনার জন্য সংগ্রহ করতে সুবিধা হয়।
আমি বেক্তিগত ভাবে হাড়ি বেবহার করি। আপনি বক্স ও
ব্যাবহার করতে পারেন।
ধাপ ৬ অপেক্ষাঃ
;) J J এবার আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে কবে পাখি ডিম দিবে। ডিম দেয়ার ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই আশা করা যায় বাচ্ছা পেতে শুরু করবেন। বাচ্ছা পাবার পর
আপনার কাজ বেড়ে গেল। সিড মিক্সের সাথে প্রতিদিন সফটফুড দিবেন, শাক, ভিজানো ছোলা,
শেদ্দ ভুট্টা, হার্ড বয়েল মুরগির ডিম। অবশ্যই ২ ঘন্টার বেশি রাখবেন না। শাক কেটে
দিবেন, হার্ড বয়েল মুরগির ডিম ভেঙ্গে গুড়া করে দেবেন। প্রতি দিন এটা চেস্টা করবেন।
আসলে যদি আপনি খালি সিড মিক্স দেন তবে পাখির অনেক সময় লেগে যায় সিড মিক্সকে চিবিয়ে
বাচ্চাদের জন্য রেডি করতে। আর পাখিরাও ক্লান্ত হয়ে যায়, তাড়াতাড়ি। তাই বাচ্চারা যত
বড় হয় পাখিদের প্রেশার তত বাড়ে। একসময় পাখি আর খাবার কাইয়ে শেষ করতে পারেনা। তাই
বাচ্চা মারা যায়। তাই আমি বলি সফট ফুড দিতে। আর এগুলো বাচ্চা দেবার আগেই দিবেন না
হলে এই সব খাবারের সাথে পাখি অভ্যস্ত হতে পারে না।
ধাপ ৭ খাঁচা পরিস্কারঃ
সপ্তাহে ১ বার না পারলে ১০ দিনে একবার পাখির
খাঁচা পরিষ্কার করবেন। এতে পাখিদের রোগ বালাই কম হবে। বাচ্ছা ফুটার ৩০ দিন পর হাড়ী
পরিষ্কার করে নতুন হাড়ি দিবেন। আগে কাঠের গুড়া দিয়ে তার উপর বাচ্চা গুলা রাখবেন।
আগের হাড়ি পানিতে ভিজিয়ে রাখুন ১ দিন তারপর আপনার পরিষ্কার করতে সুবিধা হবে।
পরিষ্কার করে ভাল করে শুখান। তার পর এতে কাগজ ভরে আগুন জালিয়ে দিন। সব জিবানু মরে
যাবে। আর যদি এই সব করতে না ভাল লাগে ফেলেদিন। ৩০টাকা দিয়ে নতুন হাড়ি কিনবেন পরের
বার। যেটা আপনার জন্য সুবিধা।
বাচ্চার বয়স ৪৫ দিন হলে এই হাড়ি ও বেরকরে ফেলুন
এবং মালসা দিয়ে দিন। দেরি করলে পাখি আবার মেটিং করে ডিম দিয়ে দিতে পারে। বাচ্চাদের
বাবা মায়ের সাথে ৬০/৭০ দিন রাখবেন। যখন দেখবেন পাখির বাচ্চারা আর মালসায় বসে না
সরিয়ে নিন মালসাটা।
আশাকরি আপনি এই ৭ ধাপ ফলো করলে ভাল ফল পাবেন।
ভুল পেলে ধরিয়ে দিন। আমার ও নতুন কিছু শিখা হবে। ভাল থাকুক আপানার পাখি।
Nice post
ReplyDelete